জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-০১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, বি (অনার্স) এম এ বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, সুপেয় পানির প্রাপ্যতা, লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিককার ওপর নেতিবাচক প্রভাব শুরু হলেও এই ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সেভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। যদি সরকার উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে তাহলে এই উপকূলের মানুষের সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এজন্য পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে। না হলে এই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির প্রভাবে উপকূলে সাধারন মানুষের হাহাকার বাড়বে।
আজ ২২ মার্চ ২০২৩ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা পরিষদ হল রুমে পানি অধিকার প্রচারাভিযান ওয়াটারম্যুভ ক্যাম্পেইনের আওতায় আইএসডিই বাংলাদেশ, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান এবং একশন এইড বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শুনানিতে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে পানি শুনানীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল হক ছু্েট্টা। আলোচনায় অংশনেন বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন, উপজেলা আওয়মীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা, এমপির একান্ত সচিব আমিন চৌধুরী, ভার্চু স্কুল এ্যান্ড কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মহিউদ্দীন কাদের অদুল, চকরিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিনিধি ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য মনজুর আলম, জিয়াউদ্দীন ফারুক। ভুক্তভোগী জনগণের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আঞ্জুমান আরা বেগম, মোবারকা বেগম, মাইমুনা খাতুন, আবু বকর সিদ্দিক, ভাচু স্কুল এ্যান্ড কলেজ এর ছাত্র ইমাম হোসেন, ছাত্রী ইশরাত সুলতানা ঈশা এবং আইএসডিই কর্মসুচী সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির ভাষণে কক্সবাজার-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম আরও বলেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ১ ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখার জন্য অনুশাসন দিলেও চকরিয়াতে মিটা পানির সেচের অভাবে ১৫০০ হেক্টর কৃষি জমি অনাবাদী থেকে গেছে। যা এতদাঞ্চলে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চকরিয়া-পেকুয়াতে সুপেয় পানির সমস্যা সমাধান করা গেলে লবনাক্ততায় জনজীবনে আরও দুর্দশা নেমে আসবে। সেজন্য জরুরিভাবে উপকুলীয় জনগোষ্ঠির জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে দৃষ্ঠি আকর্ষন করবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, স্লইটস গেট ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠ নিয়মনীতি উপেক্ষা করার কারণে লোনা পানি ঢুকিয়ে দিয়ে মাছ ছাষের কারণে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর চিংডি চাষের নামে চকরিয়ার বৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন উজাড় করে দিয়ে পরিবেশের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। একই সাথে মিটা পানির আধার মাতামুহুরী নদীর পানি ধরে রাখা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি প্রজাতির সম্প্রসারণ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার। বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির অনিশ্চয়তা কীভাবে অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে ব্যাহত করছে, এই শুনানির মধ্যে দিয়ে তা ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সরাসরি জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে যা আগামীতে পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্ব পানি দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আজ বুধবার ২২ মার্চ, ২০২৩ চকরিয়ায় এক পানি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পানি অধিকার প্রচারাভিযান ওয়াটারম্যুভ ক্যাম্পেইনের আওতায় আইএসডিই বাংলাদেশ, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এবং একশন এইড বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই শুনানিতে সুপেয় পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠী, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, উপকূলে জলবায়ু ও পানি সংকট নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ, ভুক্তভোগী ৫০ এর অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।