২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পুরণে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সিগারেটসহ তামাক থেকে পাওয়া রাজস্ব চেয়ে অনেক বেশি টাকা তামাকজনিত স্বাস্থ্যখাতে খরচ হয়। ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ-বিএটিবির বোর্ডে কেন এতজন সরকারি সচিব রয়েছেন তা খতিয়ে দেখার কথা জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
সকালে পরিকল্পনা কমিশনের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকজাত পণ্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ সংক্রান্ত আলোচনা সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রিমিয়াম, উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন এই চারস্তরের সিগারেট ও কর রয়েছে। আর এই বহুস্তর বিশিষ্ট জটিল করকাঠামোর কারণে প্রতিবছর সিগারেট কোম্পানীগুলো শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সভার আয়োজক বিএনটিটিপির ফোকাল পার্সন ড. রুমানা হক। তিনি বলেন,বিদ্যামন অ্যাডভোলেরাম ট্যাক্সের বদলে প্রতি প্যাকেটে সুনির্দিষ্টভাবে কর বসালে একদিকে সরকারের রাজস্ব বাড়বে,অন্যদিকে সিগারেটের ব্যবহার কমায় রক্ষা পাবে জনস্বাস্থ্য।
বাংলাদেশের সিংগভাগ সিগারেটের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো বাজেটে মূল্যবৃদ্ধির পরও পুরান রেটের সিগারেট নতুন দামে বিক্রি করে প্রতি মাসে শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে জানান একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও প্রবন্ধ উপস্থাপক সুশান্ত সিনহা।
বলেন, এনবিআর প্রতিবার সর্বোচ্চ করদাতা হিসাবে বিএটিবিকে পুরস্কৃত করে। অথচ তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের ৯৬ শতাংশই দেয় জনগণ। ২০২০ সালে বিএটিবি ২৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব দেয়ার কথা বলেছে। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক,ভ্যাট, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ও কাস্টমস ডিউটি থেকে এসেছে ২৩ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। যা সিগারেট কেনার সময় ভোক্তা তথা জনগণ দিয়ে থাকে।অথ্যাৎ ৯৬ শতাংশ টাকাই জনগণ দেয় কিন্তু সর্বোচ্চ করদাতার ক্রেডিট নেয় বিএটিবি। সুশান্ত সিনহার বলেন,বিএটিবি মাত্র ১ হাজার ৬ কোটি টাকা আয়কর দিয়েছে যা তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের মাত্র ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। বিদ্যামান জটিল কর কাঠামোর কারণে ২০২০ সালে বহুজাতিক কোম্পানীটি ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা নীট মুনাফা করেছে। যা আগের বছরের যে ১৮ শতাংশ বেশি। সিগারেট ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায় কর পরবর্তী এত মুনাফা করার সুযোগ নেই বলেও প্রবন্ধে তুলে ধরেন এই তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক।
ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যাোবাকো কোম্পানীর পক্ষে এনবিআরে নানামুখী তদবির করেন বিএটিবির বোর্ডে থাকা সরকারের সচিবরা। সিগারেটে কোম্পানির পক্ষে এমন তদবির মোকাবেলার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড.নাসিরউদ্দিন আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে বিএটিবিতে সরকারের মাত্র দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এইটুকু শেয়ারের বিপরীতে কেন বিএটিবির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের জনপ্রশাসন সচিব, শিল্প সচিবসহ ৪ জন সচিব রয়েছে তা বোধগম্য নয় বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বলেন. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেনে বুঝেই ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর এ ঘোষণা রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের জন্য নির্দেশ বলেও জানান মন্ত্রী। সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্য থেকে পাওয়া রাজস্বের চেয়ে তামাকজনিত অকাল মৃত্যু, পুঙ্গত্ববরণসহ ক্যান্সার, হৃদরোগসহ অসুখ বিসুখের পেছনে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়বলেও জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী।তাই ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবানও জানান এম এ মান্নান।
লেখক: সুশান্ত সিনহা, বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টেলিভিশন এবং জনস্বাস্থ্য ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক
sinhasmp@yahoo.com